আমান উল্লাহ আমান, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে :

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের মাঝে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। সাগরের সুনীল জলরাশি আর নারিকেল গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য্য। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর কেয়া গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে আলাদা এক বৈশিষ্ট যা আর কোথাও নেই। রাতের জোৎসনা এসে যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন আরও নীলাভ হয়। ঢেউয়ের আঁছড়ে পড়া গর্জন বুকে অনুভুতি জোগায়। অপূর্ব ও অসাধারণ সেন্ট মার্টিনের একটি নির্ঘুম চাঁদনী রাত, এখানে সময়ের কাঁটা এগিয়ে চলে কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা মেটে না।

অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পুরো দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে নারিকেল বাগান এটি। এই দ্বীপে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের বসবাস। সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ এরা। দ্বীপটি আলাদা একটি ইউনিয়ন। কোন প্রকার চুরি ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা নেই দ্বীপে।

বাংলাদেশে যতগুলো দৃষ্টনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে সেন্টমার্টিন অন্যতম ও নান্দনিক। দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। ব্লু-মেরিন, অবকাশ, সীপ্রবালসহ কয়েকটি হোটেল মোটেল ও কটেজ রয়েছে। এখানে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুতই একমাত্র ভরসা। এখানকার তাজা রুপচাঁদা মাছের ফ্রাই আপনার জ্বীভে জল আনবেই। নানান প্রজাতী মাছের হরেক রকম শুটকী এখানে পাওয়া যায়।

এখানে দুই ধরনের পর্যটক বেড়াতে আসে। কেউ কেউ সেন্ট মার্টিন এসে ঐ দিনই ফিরে যায়। আবার কেউ কেউ রাত্রি যাপন করে। যারা দিনাদিনই চলে যায় তাদের দেখার সুযোগ খুব কম। কিন্তু যারা রাত্রিযাপন করেন তাদের জন্য রয়েছে অপার সুযোগ।

প্রথম দিন ঃ স্বপ্নের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে দেখতে শীত উপেক্ষা করে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি। শীতের সকালে চারদিক আবছা কুয়াশা। দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক জড়ো হচ্ছে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন জেটি ঘাটে। স্থানটি ক্রমশ পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব ও প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার (৮-৯ ডিসম্বের) দুই দিন সেন্টমার্টিন ভ্রমনে টেকনাফ পাইলট ও হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘৯৮ ব্যাচ’র কয়েকজন বন্ধুরা আগত পর্যটকদের সাথে মিশে যাচ্ছে। সকাল ৯ টা বেজে গেছে। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ৩২ জন বন্ধু জড়ো হলো। সিদ্ধান্ত হয়েছে কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন করে প্রবালদ্বীপে যাবো। সাড়ে নয়টার একটু আগে বন্ধু জাহাঙ্গীরের সৌজনে সকল বন্ধু নীল বর্ণের গেঞ্জি গায়ে দিয়ে জাহাজের দিকে অগ্রসর হলাম। একই রকমের গেঞ্জিতে ৩২ জন বন্ধু একসাথে জাহাজে উঠতে দেখে পর্যটকদের চোখ স্বাভাবিক ভাবে আমাদের দিকে। জাহাজে উঠে যার যার সিটে বসে পড়লো। যথাসময়ে আমাদেরসহ আরো কয়েকশত পর্যটক নিয়ে স্বপ্নের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন জাহাজের যাত্রা শুরু হলো। নাফ নদীর বুক চিরে জাহাজ চলছে। যতই চলছে জাহাজ ততই আনন্দ হিল্লোলে মেতে উঠেছে বন্ধুরা। সাথে আরো অনেক পর্যটক। আমাদের পিছনে আরো ৫ টি জাহাজ এগিয়ে চলছে। তাদের গন্তব্যও সেন্টমার্টিন। পূর্ব দিক মিয়ানমারের কাঁটাতারের সীমান্ত, আর পশ্চিম সীমান্তে বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি। জাহাজের সাথে স্থানীয় ভাষায় গঙ্গা কবুতর পাখির কিছির মিচির কল-কাকলীতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলেছে। অনেকে চিপ্স ছুঁড়ে দিচ্ছে উড়ে আসা অতিথি ওই পাখিদের। কয়েক কিলোমিটার পর জাহাজটি যখন বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে তখন চারদিকে অথৈ নীল স্বচ্ছ পানি আর পানি। বড় বড় ঢেউগুলো আঁছড়ে পড়ছে। ডেউয়ের তালে তালে জাহাজটি দুলছে। অনেকে ভয় পেলেও সকলে মজা করতে লাগলো। এভাবে বেলা ১২ টায় জাহাজটি পৌঁছে গেলো ভ্রমন পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট সেন্টমার্টিন।

সারি বদ্ধভাবে নেমে পড়লো পর্যটকরা। অনেকে প্রথমবারের মাতো পা রাখলো সেন্টমার্টিনের মাটিতে। সাথে আমরা ৩২ বন্ধুও। ৯৮ ব্যাচের অন্যতম উদ্যোক্তা প্রিয় বন্ধু শাহাদত হোসেন আমাদের জন্য আগে থেকে হোটেল ব্ল-সী বুকিং করে রেখেছে। সবাই ওখানে উঠে গেলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে কিছু সময় পর বন্ধু মোহাম্মদ রফিকের আয়োজনে হোটেলে আল্লাহর দানে দুপুরের খাবার সেরে আবারো সকলে হোটেলে ফিরে গেলাম। তখন বিকাল আড়াই টা বেজে গেছে। এই সময়ে মোবাইলে ফোন এলো জাহাজ ইনচার্জ শাহ আলম ভাইয়ের। তিনি জানিয়েছেন, আবহাওয়ার অবস্থা ভাল নই, নদী বন্দর গুলোকে ৩ নং সতর্ক সংকেত দেখ যেতে বলা হয়েছে। এই সংকেত জারি থাকলে জাহাজ আগামীকাল (৯ ডিসেম্বর) আসবেনা। সুতরাং সবাইকে আজকে (৮ ডিসেম্বর) চলে যেতে হবে। ঘোষনাটি বন্ধু শাহাদতের সাথে আলোচনা করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হলো। এর মধ্যে বন্ধু আবদুল আজিজ, দুলাল, আমিনুল ইসলাম সৈকত ও হারুনসহ কয়েকজন বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় ফিরে গেলো।

বিকাল ৩ টায় ফুটবল নিয়ে গ্রুপ সহকারে দ্বীপের দক্ষিন পয়েন্ট যাওয়া হলো। সেখানে প্রায় ঘন্টা খানেক প্রীতি ম্যাচ খেলা হলো। অনেক আনন্দ আর হই হুল্লোড়ে খেলা শেষ করা হয়েছে। কেউ হারেনি। অনেকে সেই স্কুল জীবন শেষ করার পর থেকে আজকে ফুটবলে পা রেখেছে। ক্লান্ত শরীরে সবাই পূর্ব বীচ পয়েন্টে সাগরে ¯œান করতে নেমে পড়লো। কিছুক্ষণ সাতার ও সমুদ্র ¯œান শেষে রুমে গিয়ে এবার যে যার মতো করে বেরিয়ে পড়লো সন্দ্যাকালীন সেন্টমার্টিন অবলোকনে। রাতের খাবার বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমের আয়োজনে বেশ ভালভাবেই হলো।

রাত বাড়ছে। বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। ৩ নং সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। সাগরের গর্জন বাড়ছে। একটি ঢেউ পাহাড়সম আঁছড়ে পড়ছে কিনারায়। প্রচন্ড শীতের সময়ও শীত অনুভব নেই। এই সময়ে হঠাৎ আবহওয়ার পরিবর্তণ, যা অকল্পনীয়।

দ্বিতীয় দিন : সকালে মুয়াজ্জিনের আযানের সাথে ভাঙ্গছে ঘুম। তখনও বাতাসের গতিবেগ আগের মতো। একটুও কমেনি। খবর নিয়ে দেখলাম ৩ নং সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। পর্যটকবাহী কোন জাহাজ সেন্টমার্টিনে আসছে না। জাহাজ না আসায় দ্বীপে আটকা পড়লো প্রায় ৬শতাধিক পর্যটক। দ্বীপের সাথে টেকনাফ চলাচলকারী সার্ভিস বোটগুলোও প্রশাসনের অনুমতি বিহীন ছাড়া হচ্ছেনা। আজকের সকালে (৯ ডিসেম্বর) সার্ভিস বোট করে যাওয়ার জন্য বন্ধু আব্বাস উদ্দিন রানা ও শিমুল চন্দ্র ধর গতকালের জাহাজে করে যায়নি। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে হতবিহবল হয়ে পড়ে তারা। কারণ তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। যাতে না গেলে বড় ধরনের লোকসান আসবে। যাই হোক অপেক্ষায় থেকে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে অবশেষে একটি সার্ভিস বোট ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পেলো। সকাল সাড়ে ১০ টায় দুই বন্ধুকে বিদায় দিয়ে বন্ধু জাহাঙ্গীর ও ইসমাইলকে নিয়ে পশ্চিম দক্ষিনাংশ পয়েন্ট দিয়ে সৈকতে হাঁটছি এবং পছন্দনীয় স্থানে ফটো সেশন করছি। নারিকেল জিনজিরায় গিয়ে ডাব না খেলে কি হয়। একটি ডাব বিক্রির স্থানে ডাব খাওয়া হলো। খুব মিস্টি পানি। তবে ডাবের দাম ৪০ টাকার নীচে নই। প্রায় ঘন্টা দুয়েক ঘুরার পর হোটেলে ফিরে দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুত।

বিকালে আবারো সকলে একসাথে বেরিয়ে পড়লাম। এসময়ে দ্বীপের মানুষের হালচাল, মৎস্য শিকার, দ্বীপের একমাত্র বাজার, দ্বীপের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও সূর্য্য অস্তের দৃশ্য অবলোবকন করে নিলাম। যথারীতি সন্ধ্যা নেমে আসায় আমরাও রুমে ফিরে এলাম। একটি রুমে আড্ডায় মেতে উঠলো সকল বন্ধুরা। সেই শৈশব থেকে আজ অবধি বিভিন্ন কাহিনী উঠে আসে। অনেকের বর্তমান সুখ দুঃখের কাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষনামুলক আড্ডায় মেতে উঠে। ওই দিকে সাগরের অনবরত গর্জন ও শোঁ শোঁ বাতাসের গতিবেগ বেড়েই চলেছে। যথাসময়ে রাতের খাবার খেয়ে অনেকে ফের আড্ডায় বসেছে আবার অনেকে নিদ্রায় মগ্ন।

তৃতীয় দিন ঃ আজকেও (১০ ডিসেম্বর) সকালে মুয়াজ্জিনের আযানের সাথে ভাঙ্গলো ঘুম। মসজিদের কাছাকাছি হোটেলটির অবস্থান। অনেকে নামাজের জন্য বেরিয়ে পড়লো। বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমেছে। কিছুক্ষন পর খবর নিয়ে জানা গেল সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। জাহাজ আসবেনা। খবরটি সব বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা হলো। এরমধ্যে অনেক বন্ধু আজকে সার্ভিস বোট নিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সকাল দশটার দিকে আবু তালেব, ইউসুফ, ইউনুছ, জহির, ইউনুছ, জোবাইর, ইউনুছ, শফি উল্লাহ, রাসেল ও আয়ুব চলে গেলো। ৩২ জন বন্ধুর মধ্যে শাহাদত, রফিক, জাহাঙ্গীর, ইয়াকুব, হারুন, ইসমাইল, হাসান রয়ে গেলাম।

দুপুরের খাবার সেরে ঘন্টা দুয়েক রেস্ট থাকার পর বিকাল ৩ টার পরে সৈকত বীচে বেরিয়ে পড়লাম বাকী বন্ধুরা। সৈকতের চিক চিক বালিয়াড়ী ও পর্যটকদের জন্য ভাড়ায় দেওয়া চেয়ারে বসে গল্প গোজবে কখন যে সময় পার হয়ে যায় বুঝা যায়না। ঝির ঝির হিমেল হাওয়া ও সাগরের অনর্গল গর্জন মনের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়। মন চায় সারারাত সারাবেলা এভাবে কাটিয়ে দিতে। সন্ধ্যা নেমে আসায় রুমে ফিরে আসা হলো। এদিনে দ্বীপের আরেক বন্ধু খোরশেদ আমাদের সকলকে হোটেল ব্লু-মেরিনে বারবিকিউ’র দাওয়াত করেছে। রাত ৮ টার দিকে রওয়ানা হলাম হোটেলে। বন্ধু খোরশেদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম। এর মাঝে রাতের বেলায় সৈকতে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রেখেছে সে। আধুনিক ও আঞ্চলিকসহ স্থানীয় বিভিন্ন গান শুনে আনন্দে নেচে গেয়ে রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত সৈকতে সময় পার করে দিয়ে যথারীতি হোটেলে ফিরলাম।

চতুর্থ দিন ঃ সকলে অস্থির হয়ে উঠেছে। দ্বীপে অন্যান্য দিনের চেয়ে বাতাসের গতি বেগ কমেছে। আলাপ চারিতার ফাঁকে আবহাওয়া ও সতর্ক সংকেতের খবর নিতে ইউএনও, রেডক্রিসেন্ট, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে লাগলো। সকলে হতাশ। ৩ নং বিপদ কাটেনি। তবে সিগন্যাল সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দিনের স্থলে চারদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু না এদিনও শেষ পর্যন্ত সিগন্যাল রয়ে গেছে। আকাশের পরিবর্তন দেখা দিলেও সিগন্যালের কোন পরিবর্তন নেই। জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। এর ফাঁকে সকাল ৭ ্টায় হালকা নাস্তা সেরে বন্ধু ইসমাইল ও হাসানকে সংগে নিয়ে ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে পূর্ব সৈকত পয়েন্ট দিয়ে দক্ষিনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। সাথে সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, নারিকেল বাগান, খেয়াগাছ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। পছন্দনীয় স্থানে ক্যামরাবন্ধী হতে ভুল নেই। প্রায় ঘন্টা খানেক হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম ছেঁড়া দ্বীপে। চারদিকে পাথরে ভরপুর। মাঝখানে খেয়া গাছ। প্রকৃতির কি অপুর্ব সৃষ্টি। স্বচ্ছ পানি দিয়ে পাথর দেখা যাচ্ছে। কয়েক মিনিটি ছেড়া দ্বীপের চারদিক দেখা হলো। কিছুক্ষন অবস্থান নিয়ে বিদায় জানালাম ছেড়া দ্বীপকে। সেন্টমার্টিনের দক্ষিনাংশের মধ্য পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম। সেখানে দেখা হলো ছোট ছোট টিলা আর পাথরের স্তুপ। সবখানে মানুষের বসতি ও জবর দখল। সেন্টমার্টিনের দক্ষিনাংশে কোন উন্নয়ন চোখে পড়েনি। যা কিছু উত্তরাংশে হয়েছে। তবে দক্ষিনের পূর্ব-পশ্চিমে দূয়েকটা রিসোর্ট দেখা গেলেও নেই পর্যটক। কারণ সেখানে আসার মতো কোন ভাল সড়ক নেই। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এখনো দ্বীপের এই অংশে। দ্বীপের একমাত্র বাহন হচ্ছে ভ্যানগাড়ী। এমনকি দক্ষিনের অংশে সেই ভ্যান গাড়ী আসার মতো ব্যবস্থা নেই। অনেক স্থান জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ওই স্থানে বেড়ী বাঁধ অতি জরুরী বলে মনে হলো। কোন যান না থাকায় আমাদেরও এই লম্বা পথ ধরে হাঁঁটতে হচ্ছে। প্রচন্ড রৌদ্রের খরতাপে আমরা প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁেট রুমে পৌঁছে গেলাম।

পঞ্চম দিন ঃ সকাল ৭ টায় বন্ধু ইসমাইল ও হাসান সার্ভিস বোটে করে চলে যাওয়ার জন্য জেটি ঘাটে আসে। বোট ঠিকই ছেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাহাড়সহ ঢেউ ও তার অনবরত গর্জন দেখে সাহস করতে পারেনা সেন্টমার্টিন থেকে সাগর পথে সার্ভিস বোটে করে টেকনাফ পাড়ি দেওয়ার। ওই দিকে তাদের আপনজনদের নিষেধ রয়েছে কোনভাবেই যেন সর্ভিস বোটে যাত্রা না করে। এক প্রকার সিদ্ধান্তহীনতায় সকাল ১১ টা বেজে গেছে। এই পাঁচ দিনে দ্বীপের আনাচে কানাচে ঘুরা হয়ে গেলো। দ্বীপে ভাল লাগলেও এক প্রকার বন্দী জীবনের মতো অতিষ্ট হয়ে উঠে সবাই। এরি মধ্যে খবর খবর এলো বিপদ সংকেত কেটে গেছে। আটকে পড়া পর্যটকদের নিয়ে যেতে কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ জাহাজ দুটি আসছে। এই খবরে সকল বন্ধুদের চোখে মুখে এক ধরনের আনন্দ উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত। দুপুরের খাবার খেয়ে সেন্টমার্টিনকে বিদায়ের প্রস্তুতি চলছে। দুই দিনের ভ্রমনে এসে প্রকৃতির রোষানল বিপদ সংকেতে পড়ে চারদিন চলে গেলো। অনেকের চাকুরিজীবী হওয়ায় অস্থিরভাবে কেটেছে ওই দিনগুলো। অতঃপর টেকনাফের দুটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯৮ ব্যাচ বন্ধুদের মিলনমেলা স্মৃতি হয়ে রইলো। তবে সেখানে কোন অসুবিধার সম্মূখীন হতে হয়নি। অবশেষে বিকাল ৩ টার দিকে জাহাজ সেন্টমার্টিনের জেটি ঘাটে ভিড়েছে এবং আমাদেরসহ আটকে পড়া প্রায় ৬ শতাধিক পর্যটকদের নিয়ে ফের জাহাজ দুটি বঙ্গোপসাগরের আঁছড়ে পড়া পাহাড়সম ঢেউ অতিক্রম করে ছুঁটছে আপন গন্তব্যের দিকে….